“Book Descriptions: কলকাতার অন্ত্যজ শ্রেণিদের নিয়ে সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বা অনিন্দিতা ঘোষের কাজ সুবিদিত। কিন্তু সে নিতান্ত গবেষকের চোখে। একেবারে চোখে দেখা বর্ণনা প্রায় নেই বললেই চলে। উনিশ শতকের শেষ বা বিশ শতকের শুরুর সময়ে কলকাতার গণিকা, অপরাধ বা পাপের বেসাতির খবর জানার মূল উৎস এখনও বটতলার চটুল বইগুলো, যাদের নাম শুনলেই রোমাঞ্চ হয়। কিন্তু সে লেখা নিতান্ত ফিকশন। তাতে সত্য-মিথ্যের মিশেল আছে। কিন্তু এই বইখানা একেবারে খাঁটি নন-ফিকশন। আর সেখানেই এই বইয়ের গুরুত্ব। হুতোম যেমন উনিশ শতকের কলকাতার দারুণ এক ছবি ফুটিয়েছেন তাঁর নকশায়, এই বইও সেই মর্যাদা পাবার যোগ্য। খুব কাছে হয়তো বা আসতে পারে “সচিত্র গুলজার নগর”, “কলিকাতা কমলালয়” বা “পুরাতন পঞ্জিকা”-র মতো বই।এই বই ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল, আর তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ টীকা এবং ব্যাখ্যা দাবি করে। হেমেন্দ্রকুমার যখন এই বইটি লিখছেন, তখনকার কলকাতা আর আজকের কলকাতা এক না। লপেটা, গ্যাসের আলো, ছ্যাকরা গাড়ি, হেজেলিন, আবু হোসেন শব্দগুলো তখন বাঙালির রোজকার শব্দবন্ধে থাকলেও এখন তারা বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে গেছে। প্রয়োজন মুগাহাটা, গ্যাঁড়াতলা, মালাপাড়া গলি বা চন্ডুখোরের আস্তানার মতো স্থানের বিস্তারিত আলোচনাও। ঠিক এই কারণে উপযুক্ত টীকা এবং চিত্রসহ বইটিকে প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে অগ্রজ অরুণ নাগের প্রায় মিথ হয়ে যাওয়া “সটীক হুতোম প্যাঁচার নকশা”-কে সামনে রেখে প্রায় একলব্যের মতো টীকা দিয়ে গেছি। যদিও সে এক অসম্ভব উচ্চতা, তবু বড়ো কিছু ভাবতে গেলে বড়োদেরই তো সামনে রাখতে হয়, তাই না? টীকা দানের ক্ষেত্রে যেসব বইয়ের সাহায্য নেওয়া হয়েছে তাদের বিস্তারিত তালিকা এই বইয়ের শেষে দেওয়া হল। ছবির ক্ষেত্রে সুকুমার রচনাবলি থেকে লাইফ ম্যাগাজিন, অসিত পালের বই বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের অনলাইন আর্কাইভ, সব কিছুরই সাহায্য নেওয়া হয়েছে। মেঘনাদ গুপ্ত বা হেমেন্দ্রকুমারের লেখা “রাতের কলকাতা” এই বিরল শ্রেণির বই। প্রতিটি ভাষায় এমন বই একটি দুটিই লেখা হয়, বা হয়ও না। এ বই প্রায় ফটোগ্রাফের মতো একশো বছর আগের কলকাতার রাত্রি রহস্যকে ফুটিয়ে তুলেছে নিখুঁতভাবে। এই অসামান্য বইটির সটীক সংস্করণ পাঠক সমাজের কলকাতা-চর্চায় উৎসাহ বাড়ালে এই কাজ সত্যিকার সাফল্য পাবে।” DRIVE