প্রদীপ্ত কুটির
(By আরিফুল ইসলাম) Read EbookSize | 26 MB (26,085 KB) |
---|---|
Format | |
Downloaded | 654 times |
Last checked | 13 Hour ago! |
Author | আরিফুল ইসলাম |
এটা সত্য যে খ্রিষ্টধর্মগুরুদের পৈশাচিকতা, ইনকুইজেশন আর চার্চের ভয়ঙ্কর হিংস্র হাতের টেনে ধরা বন্ধনে হাঁসফাঁস করে ওঠা ইউরোপীয় বিজ্ঞান আর শিল্পকে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচার আগমনী সঙ্গীত শুনিয়েছিল সেক্যুলারিজম মুভমেন্ট। কিন্তু খ্রিষ্টধর্মের প্রভাব থেকে আলোকবর্ষ দূরে থাকা উপমহাদেশেও যখন কপি-পেস্ট করে সেই পশ্চিমা ফর্মুলা বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, আমাদের নড়েচড়ে বসতেই হয়। আমাদের বলতে হয়–‘তোমরা ভুল করছো, তোমরা ইসলামকে অন্য ধর্মের সাথে গুলিয়ে ফেলছ। আমরা জ্ঞানের দুয়ার রুদ্ধ করে দিই নি, দিয়েছ তোমরা। তোমাদের ফর্মুলা পার্সি-জৈন-ইহুদি-খ্রিষ্ট আর পৌত্তলিক ধর্মগুলোকে সভ্যতা নির্মাণে দমিয়ে রাখতে পারে, ইসলামকে পারবে না। এ দ্বীন এসেছেই বিজয়ী হতে’।
ধর্মকে ব্যক্তিবিশেষের চর্চার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর সীমার মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলার চেষ্টা যত বাড়ে, ততই যেন বস্তুবাদীদের হতাশ করে তারুণ্যের ঝাঁক ইসলামকে আরো বেশি করে কাছে টেনে নেয়। মানবজীবনে কুরআন-সুন্নাহকে যত বেশি অপ্রাসঙ্গিক করে দেখানোর চেষ্টা হয়, ততই যেন নিত্যনতুন কালচারাল কনফ্লিক্ট আর সাইকোলজিক্যাল কমপ্লেক্সিটি চোদ্দশ বছর আগের সেই মহামানবের শিক্ষার প্রাসঙ্গিকতা চোখে আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়।
তাই তো মক্কার মুশরিকদের মতো একালের সেক্যুলাররাও যখন ঠাট্টা করে বলে–“এ কেমন ধর্ম রে বাবা! টয়লেটে যাওয়াও শেখায়!” তখন আমরা সালমান ফারসী (রাদিয়াল্লাহু আনহু)–এর মতো করেই বলি, “এটাই তো আমাদের গর্ব যে আমরা এক রাসূলের অনুসরণ করি যিনি এত ছোটখাট বিষয়েও দিকনির্দেশনা দেন”।
এ এক আশ্চর্য জীবনবিধান। মিসওয়াক থেকে ড্রোন, বেডরুম থেকে গণভবন–কোথায় নেই এ ধর্ম! কোথায় নেই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদর্শ!
প্রাচ্য-প্রতীচ্য দাপিয়ে বেড়ানো সেই আলোর মশাল আজ নিভুনিভ। এসময় সেই মশালের আগুন ধার করে প্রদীপ জ্বালাচ্ছে কিছু তরুণ। তারা শপথ নিয়েছে, আলোটাকে হারিয়ে যেতে দেবে না। মশাল নিভুক, কিন্তু একটি একটি করে জ্বালানো প্রদীপের আলোয় একের পর এক ঘরকে ভরিয়ে দেবে। গড়ে তুলবে একেকটি প্রদীপ্ত কুটির।
এই বইটি তেমনই দুজন তরুণ-তরুণীর গল্প। অপসংস্কৃতির নিকষ অন্ধকার যখন পতনের হতাশার পালে হাওয়া দেয়, তখন তাদের ঘর থেকে বেরোয় দীপ্তি। এই দীপ্তি সত্যের, এই দীপ্তি জ্ঞানের, এই দীপ্তি আদর্শের।
যে সুন্নাহ মুসলিমদের করতলে বিশ্বকে এনে দিয়েছিল, সেই সুন্নাহ আজ ঘর থেকেই হারিয়ে গেছে। মাহির ও লাফিজা আপ্রাণ চেষ্টা করছে তা ফিরিয়ে আনার। ওরা দুজন স্বামী-স্ত্রী। একে অন্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, ভুলটাকে শুধরে দেয়, সত্যের পথে থাকতে অবিচল প্রেরণা যোগায়।
বলে রাখা ভালো, এই স্বামী-স্ত্রীর চরিত্র কিংবা তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো স্রেফ গল্প উপস্থাপনের মাধ্যম হিসেবেই আনা হয়েছে, গল্পের উদ্দেশ্য চরিত্রের ফোকাস নয় বরং সুন্নাহগুলোকে তুলে ধরা।
-----------------------------------------------------------------------
হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা, যার বাঁশির সুরের সম্মোহনী টানে শহরের হাজারো ইঁদুর তার পিছু নেয়। অদ্ভুত সুরের মূর্ছনায় আচ্ছন্ন ইঁদুররা জানতোই না যে, তারা ছুটছে মৃত্যুর পানে। ভেজার নদীর তীরে গিয়ে বাঁশিওয়ালা যখন বাঁশি বাজানো বন্ধ করলো, উন্মাদ ইঁদুরগুলো তখন হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে দলবেঁধে ঝাঁপিয়ে পড়লো ভেজার নদীতে।
যেই বাঁশিওয়ালার প্ল্যানে হ্যামিলন ইঁদুরমুক্ত হয় সেই বাঁশিওয়ালার সাথে প্রতারণা করেন হ্যামিলনের মেয়র। পরের বছর হ্যামিলনবাসীর উপর প্রতিশোধ নেবার মনস্থ করলো বাঁশিওয়ালা। এবার একটা অন্যরকম সুর বাজাতে লাগলো সে। সেই সুরের টানে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো হ্যামিলনের শিশুরা। পাগল করা সুরের পেছনে ছুটতে ছুটতে লা-পাত্তা হয়ে যায় শিশুগুলো! এরপর থেকে হ্যামিলনে আর কখনো ঐ বাঁশিওয়ালার দেখে মেলেনি।
হ্যামিলনে ঐ বাঁশিওয়ালার কখনো দেখে না মিললেও আমাদের সমাজে হ্যামিলনী বাঁশিওয়ালাদের অভাব নাই। সেইসব বাঁশিওয়ালারা নন-স্টপ বাঁশি বাজিয়েই যাচ্ছেন। তারা চায় আমরাও যাতে ডুবে মরি।
অবুঝ শিশুদের মতো আমরাও তাদের পিছু নিয়েছি। সুরের টানে ছুটে চলছি মৃত্যুপানে।
গণমাধ্যম, শিল্পসাহিত্যে এসব বাঁশিওয়ালাদের সয়লাব। তাদের সুরে সুর মিলিয়ে আমরা গাচ্ছি জীবনের জয়গান। অথচ সেই মরীচিকার পেছনে ছুটে চলা জীবনের দৌড় তো ভেজার নদী পর্যন্ত।
এই সমাজ যখন হ্যামিলনী মিছিলে সামিল হয়েছে, মাহির-লাফিজারা তখন স্রোতের বিপরীতে ছুটছে। সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতকে আঁকড়ে ধরার সংকল্প করেছে। ভুলে যাওয়া সুন্নাতগুলো একজন আরেকজনকে মনে করিয়ে দেয়। ভুলে যাওয়া সুন্নাতগুলো যখন মনে পড়ে, তখন খুঁজে পাওয়া মুক্তোর মতো সেগুলোকে আগলে রাখে, সুন্নাত মেনে চলার চেষ্টা করে।
দৈনন্দিন জীবনের সুন্নাত অনুসরণ করার গল্প নিয়েই বইটি সাজানো হয়েছে।”