“Book Descriptions: প্রথম সংস্করণে ভূমিকা দেবার প্রয়োজন বোধ করিনি অতি স্বাভাবিক কারণেই। কিন্তু এখন অবস্থাভেদে সে-প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে উঠেছে।
আমি প্রধানত গল্পকার, ইতিহাসবেত্তা নই। গল্পের প্রয়োজনে কখনো কখনো ইতিহাস, বিজ্ঞান বা সমাজ তত্ত্বের আলোচনা প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গল্পেরই প্রয়োজনে আমি প্রাচীন কলকাতার সমাজ বা জীবন-আলোচনা করেছি এবং গল্পের প্রয়োজনে তা করা অপরিহার্য বলেই করেছি, ইতিহাস সম্পর্কে কোনো নতুন আলোকপাত করবো বলে করিনি। এখানে গল্পই মুখ্য, ইতিহাস বা অন্য সব কিছুই গৌণ। কিন্তু ইতিহাসের পাখায় চড়ে আমার গল্প রস-বিহার করলেও, গল্পের পাখায় চড়ে ইতিহাস যাতে রস-বিহার না করে, সেদিকে আমার সতর্ক দৃষ্টি ছিল। সর্বত্র নিজেকে আমি সত্যের শৃঙ্খলে আবদ্ধ রেখেছি। গল্পের সুবিধের জন্যে ইতিহাসের কিছু অংশ গ্রহণ বা বর্জন করেছি বটে, কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই তাকে বিকৃত করিনি।
বঙ্কিমচন্দ্র তার ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসের ভূমিকায় লিখেছেন–“ইতিহাসের উদ্দেশ্য কখন কখন উপন্যাসে সুসিদ্ধ হইতে পারে।” ‘সাহেব বিবি গোলাম’ উপন্যাসের দ্বারা যদি কোথাও কোনোপ্রকারে ইতিহাসের উদ্দেশ্য সুসিদ্ধ হয়ে থাকে তো স্বতঃস্ফূর্তভাবেই তা হয়েছে। আমি কোথাও ইতিহাস শোনাবো বলে গল্প শোনানোর ভান করিনি।
এই উপন্যাস রচনায় যে-সব প্রাচীন, অপ্রচলিত বা আধুনিক গ্রন্থাদির সাহায্য গ্রহণ করা হয়েছে, তার জন্যে আমি স্বকৃতজ্ঞ ঋণ স্বীকার করছি। বাহুল্যবোধে তার দীর্ঘ তালিকা দিয়ে ভূমিকা দীর্ঘতর করা অনাবশ্যক। বিশেষ করে উপন্যাস পাঠকের পক্ষে তা একান্তই অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করি।